সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:২৯ পূর্বাহ্ন

যত সমস্যা তত অসুখ, ফেসবুকে খুব সুখ?

রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক, একশের কন্ঠ : আমাদের ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো ফেসবুকের ওয়ালে তুলে দিই! সমাধান হবে? বাড়বে। শুধু ফেসবুকে পরিচিত এমন কারো কাছে দুঃখ শেয়ার করি কিংবা তারা খুচিয়ে বের করে! সমাধান দিতে? নাহ। উপভোগ করতে। যেখানে সমস্যা সেখানেই সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। ফেসবুক আদালত নয় বরং প্রবলেম সেন্টার! আপনি সমস্যায় আছেন জেনে আরও পাঁচজন এসে উসকে দেবে! ক্ষতস্থানে মলমের বদলে লবন লাগাবে! ফন্দি করে বলবে, তার মত লোক আপনার সাথে এইটা করতে পারলো! ছেড়ে দেন দুনিয়া! আপনার রাগের আগুন, মান-অভিমানের দ্বিগুন করে বাড়িয়ে দেবে!

আজ পর্যন্ত শুনিনি, ফেসবুকে কেউ কাউকে নালিশ করেছে এবং নালিশদাতাকে সালিশদার বলেছে, ভুলটা তো আপনারই! বরং উল্টোটাই হয়, সাধারণ সমস্যাগুলোকে প্রকট সমস্যার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়! সাহায্যাপ্রার্থী যদি রমনীকূলের কেউ হয় তবে সমস্যা যেখানে থেমে যেতে পারত সেখান থেকেই সমস্যার আরও শাখা-প্রশাখার জন্ম হয়! মতলববাজদের কাছে দুনিয়াটা সমস্যার আতুড়ঘর! তারা নিজেদের সমস্যার চেয়ে অপরের সমস্যাগুলো বৃহদাকৃতিতে দেখতে চায়!

সমস্যাহীন জীবন হয় না! টুকটাকি সমস্যা সাধুরও আছে! সমস্যায় জড়ালে সবচেয়ে ভালো হয় নিজে নিজে সমাধান করার চেষ্টা করলে। এতে অন্তত মানসম্মান রক্ষা পায়। গোপনীয়তা জীবনের সৌন্দর্য। নিজে ব্যর্থ হলে নিজের পরিবার এবং স্বজনদের মধ্যে শুধু তারাই যারা আপনার কল্যাণকামী তাদের পরামর্শ ও মধ্যস্থতায় যাওয়া উচিত! স্বজনদের মধ্যে এমন কেউ কেউ থাকে যারা আপনার সুখ-শান্তি অসহ্য করে! ভুলেও তাদের কাছে সমাধান খুঁজবেন না!

ফেসবুকের শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছে নালিশ করার চেয়ে আদালতের বারান্দায় সমস্যার সমাধান খোঁজা ভালো! সেখানে ভালো-মন্দ উভয়ই ঘটার সম্ভাবনা-শঙ্কা থাকে! কিন্তু ফেসবুকে শুভাকাঙ্ক্ষীর ছদ্মবরণে যারা থাকে তাদের ম্যাক্সিমামও নিজস্ব জীবনের পরিমন্ডলে বাতিকগ্রস্ত! তারা কোন সমস্যার গন্ধ পেলেই নাচতে নাচতে বলে, পাইছিরে মামা পাইছি! এবার বহু রকমের স্বার্থ হাসিল করা যাবে! অন্তত কুবুদ্ধিতে আরও কিছু মানুষকে দীর্ঘদিন অশান্তিতে রাখা যাবে!

সমস্যার কথা, ব্যাথার কথা ফেসবুকে না বলে স্রষ্টার কাছে বলুন। নিজের ভুল বুঝতে চেষ্টা করুন এবং দুঃখিত হোন। যে সমস্যা দু’জনের মধ্যে এবং যে দু’জন মানুষকে সারাজীবন একসাথে চলতে হবে তাদের মাঝে অশান্তি বাড়ালে নিজেদেরই ক্ষতি হয়! এতে তৃতীয়পক্ষ কিছুটা লাভবান হতে পারে! তারচেয়েও বড় কথা, খোদা জানেন আপনার সমস্যার কথা কিন্তু তিনি ফেসবুকে থাকেন কি-না, ফেসবুক থেকে আপনার সমস্যা জেনে সেটা সমাধান করবেন কি-না সেটা নিয়ে বাহাস হতে পারে! তবে অনেকগুলো শয়তান যে ফেসবুকে আছে তাতে কোন সন্দেহ নাই।

একটু একটু করে সচেতন হোন। কারা আপনার অশান্তির সময়ে খুশি হয়, কারা আপনার ভালো চায় না, তাদেরকে চিনতে না পারলে ভালো থাকবেন কী করে? নিজের সমস্যাগুলো সবাইকে জানাইয়েন না, ফেসবুকের মত জায়গায় হাপিত্যেশ কইরেন না এবং যার-তার কাছে নিজেদের গোপনীয়তা তুলে দিয়েন না। পরিণামে পস্তাতে হবে। প্রায়শ্চিত্ত করার অবস্থাও থাকবে না।

সমস্যা আজ আছে কাল থাকবে না-এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু সেটাকে বাজারে তোলা, রুচিহীন মানুষের সাথে শেয়ার করা-এগুলো সুখের সময়েও আপনাকে ভোগাবে। আমাদের ধৈর্য শক্তি কমে গেছে। আমরা খুব দ্রুত রিঅ্যাক্ট করি, মন্তব্য করে ফেলি অথচ ভাবি খুব কম। যা আমাদের সম্পর্ক ও সহাবস্থানের বিভিন্ন গন্ডিতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। আমরা ভালো থাকার মত আচরণ কম করি! বয়সের সাথে তুলনা করে ম্যাচিউরিটি লেভেলেও বোধহয় পিছিয়ে যাচ্ছি। সমস্যা বেড়েই চলছে। যত সমস্যা তত অসুখ।

পৃথিবীতে কারো জন্য পুরোপুরি কিছুই হয় না। সম্পূর্ণতা নিয়ে কেউ আসে না। যিনি পূর্ণতা আশা করেন তিনি নানাভাবে অপূর্ণ। মানুষের মানিয়ে নেওয়ার অপূর্ব ক্ষমতা থাকতে হয়। ইচ্ছামত, পছন্দ ও রুচিমত এই জীবনে অনেককিছুই মিলবে না। চাওয়ামত অনেককিছুই ঘটবে না। তাই বলে সেই দীর্ঘশ্বাস জনে জনে জানাতে হবে? মানুষজনকে মানিয়ে নেওয়াটা দেখাতে হয়। যে বোঝে না তাকে বোঝাতে হয়, যে ভুল করে তাকে ভুল শোধরাতে সাহায্য করতে হয়। গোস্বা করে থাকলে তাতে ক্ষতি ও ক্ষোভ বাড়ে; কল্যাণ আনে না!

নিজের মধ্যে কিছু কথা, কিছু ব্যাথা পুষতে জানতে হয়! হরেদরে সব বাজারে আর নিলামে তুলে দিলে নিজের বলতে, নিজস্ব বলতে আর কিছুই থাকে না। সমস্যাগুলোর গন্ডি যত ছোট থাকবে সমাধান করা তত সহজ হবে। সমস্যার মধ্যে বেশি মানুষ জড়িয়ে ফেললে তবে সমাধানের মাঠেও অনেক মানুষকে জড়ো করতে হয়। দুঃখ-সুখ সব নিজের! সুখের ভাগীদার অহর্নিশ মিললেও দুঃখের অংশ নেওয়ার ভান্ডো খুব কম মানুষের কাছে আছে। সুতরাং এমন কিছু করা বৌদ্ধিক হবে না যা সমস্যাকে দীর্ঘায়িত করে আর দুঃখকে ভারি করে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com